প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার পর কল্যাণকর বড় যে কাজটি করেছেন সেটি হলো দেশের প্রায় ৪৬ হাজার কোটি টাকা দুর্নীতি রোধ করেছেন। কিন্তু মিডিয়া এ বিষয়টি জনগণের সামনে প্রকাশ করেনি। কেন করেনি?
ইন্টেরিম সরকার দায়িত্ব নেয়ার পরপরই এক্সপার্টদের নিয়ে
চলমান ও ভবিতব্য সকল উন্নয়ন প্রকল্প পুনঃমূল্যায়ন শুরু করে। কোথায় কোন প্রকল্পে কত টাকা বাজেট ধরা হয়েছে, কেন এবং কত লুটপাট করা হয়েছে বা পরিকল্পনা ছিলো— সবকিছুর ডেটা বিশ্লেষণ করে দ্রুত প্রতিকার নিয়ে সরকার বিশাল অংকের টাকা লুটপাট রোধ করে।
উন্নয়ন প্রকল্পগুলো পুনঃমূল্যায়ন করে দেখা গেছে যে প্রায় সব প্রকল্পেই অযৌক্তিকভাবে দেড়গুণ-দুইগুণ এস্টিমেটেড ব্যয় বা প্রাক্কলন ব্যয় ধরা হয়েছে। সরকার এই খরচ কমিয়ে এনেছে।
প্রধান উপদেষ্টার ডেপুটি প্রেস সচিবের তথ্য অনুযায়ী সড়ক পরিবহণ ও মহাসড়ক বিভাগ উন্নয়ন কাজে ব্যয় সংকোচন হয়েছে প্রায় ১০ হাজার ৮৫৪.৩২ কোটি টাকা, সেতু বিভাগে ব্যয় সংকোচন হয়েছে ৭ হাজার ৫৩৭ কোটি টাকা, রেলপথ মন্ত্রণালয় ব্যয় সংকোচন হয়েছে ৮ হাজার ৩৬.৯০ কোটি টাকা, বিদ্যুৎ বিভাগে চলমান উন্নয়ন প্রকল্পগুলো থেকে ব্যয় সংকোচন করা হয়েছে প্রায় ৭ হাজার ৪৫৪.৩১ কোটি টাকা, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের প্রকল্পগুলো থেকে ব্যয় সংকোচন করা হয়েছে ১২ হাজার ৪২৫.৫১ কোটি টাকা।
পাঁচটি বিভাগের বিভিন্ন প্রকল্প থেকে সবমিলিয়ে মোট প্রায় ৪৬ হাজার ৩০৮.০৪ কোটি টাকা ব্যয় সংকোচন করেছে এ সরকার। এই টাকাটা নিশ্চিতভাবে লুটপাট হতো, বিদেশে পাচার হতো।
আমার-আপনার, খেটে-খাওয়া সাধারণ মানুষের ট্যাক্সের টাকায় করা একেকটা উন্নয়ন প্রকল্পে কোটি কোটি টাকা লুটপাট করা হতো। সে কারণে একেকটি উন্নয়ন প্রকল্পে এস্টিমেটেড ব্যয় ধরা হতো দুই-তিনগুণ বাড়িয়ে। ইউনূস সাহেব দায়িত্ব নেওয়ার শুরুতেই এই জায়গায় হাত দিয়ে ৪৬ হাজার ৩০৮.০৪ কোটি টাকা লুটপাট থেকে উদ্ধার করে এই টাকাটা দিয়ে আমাদের জ্বালানি খাতের সমস্ত বকেয়া বিল পরিশোধ করেছেন। বর্তমানে বাংলাদেশের জ্বালানি খাতে কোনো দেশের কাছে বিল বকেয়া নাই।
ইউনূস সাহেব দেশের রিজার্ভে হাত না দিয়েই সাত মাসের মধ্যে ২৪২ কোটি ডলার বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ করেছেন এই খাত, ঐখাত থেকে টাকা সেইভ করে। এটা সম্ভব হইছে গত ৫ দশক ধরে সারা দুনিয়ায় ঘুরে কাজের মধ্যদিয়ে গড়ে তোলা তার ‘অসাধারণ’ ব্রেইনের কারণে।
যে অবস্থায় তিনি দেশের দায়িত্বভার গ্রহণ করেছেন তখন ইসলামি ব্যাংক ছাড়া বাকি সব ব্যাংকে তারল্য সংকটে বন্ধ হয়ে যাবে প্রায়ই, এরকম সিচুয়েশন থেকে ব্যাংকগুলোর কার্যক্রম স্বাভাবিক করছে তার ক্যাবিনেট। একটি ব্যাংকও বন্ধ হতে হয়নি।
শেষ মরণকামড় হিসেবে মাফিয়ারা পালিয়ে যাওয়ার আগে ইসলামি ব্যাংকেও হানা দিয়েছিল। দুদক রিপোর্ট হতে জানা গেল, প্রায় ১ হাজার ১১৩ কোটি ৯৩ লাখ ৬৪ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেছিল ইসলামি ব্যাংক থেকে। বাট তারপরও অন্যান্য ব্যাংকগুলো থেকে ব্যাংকিং কার্যক্রম অনেকটাই স্বাভাবিক ছিল ইসলামি ব্যাংকের।
ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া অর্থনীতির চাকা পুনর্গঠন করতে সরকার যেসব স্ট্রেটেজিক সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, সেগুলো বেশি সাস্টেইন করছে, এ জায়গাটা সরকারের বড় এচিভমেন্ট। এটার সবচেয়ে বড় বেনিফিশিয়ারি হবে নেক্সট সরকার।
ইন্টারেস্টিং বিষয় হলো, ভবিষ্যতে উন্নয়ন প্রকল্পগুলোতে দুর্নীতি রোধ ও অধিক সুফল নিশ্চিত করতে সরকার গত অক্টোবরে একটা পরিপত্র জারি করছে। এই পরিপত্রে বলা হয়েছে, কোনো প্রকল্প প্রস্তাব তৈরির আগে প্রকল্পের সকল তথ্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে হবে এবং জনগণকে অনলাইনে মতামত দেওয়ার জন্য ন্যূনতম ২ সপ্তাহ সময় দিতে হবে।
জনগণের মতামত নিতে হবে প্রকল্প প্রস্তাব অনুমোদেনের জন্য পরিকল্পনা কমিশনের পাঠানোর আগেই।
বাধ্যতামূলক জনসাধারণের মতামত নেওয়ার জন্য প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সকল তথ্য, যেমন: সম্ভাব্যতা সমীক্ষা, প্রকল্প গ্রহণের পটভূমি, যৌক্তিকতা, প্রকল্প এলাকা, আর্থিক ও অর্থনৈতিক সম্ভাব্য ফলাফল, পরিবেশগত ও সামাজিক প্রভাব, দুর্যোগের ঝুঁকি ও ঝুঁকি প্রশমন পরিকল্পনা ইত্যাদি ক্লিয়ারভাবে উল্লেখ করে মতামত নিয়ে পাঠাতে অনুমোদন কমিশনের কাছে। কমিশন এক্সপার্টদের নিয়ে সকল ডেটা বিশ্লেষণ করে অনুমোদনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে। প্রকল্প ব্যয়, ঠিকাদার, অনুমোদন কমিশন রিপোর্ট—সকল তথ্যই ওয়েবসাইটে জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
আমি ট্রুলি বিলিভ করি, হাসিনাগং পালিয়ে যাওয়ার পর যে অবস্থায় পড়ছিল দেশের অর্থনীতি, ঐ সিচুয়েশনে একমাত্র প্রফেসর ইউনূস ব্যতিত কারো পক্ষে সরকারের দায়িত্বভার গ্রহণ করে বেশিদিন রান করা সম্ভবপর হতো না। সম্ভবত এ একটি কারণে তার প্রতি আমাদের ভবিষ্যতে কৃতজ্ঞ থাকতে হবে।
#সংগৃহীত
0 Comments