Ticker

6/recent/ticker-posts

Ad Code

বাজেট কাট নীতির বিরুদ্ধে ‘ডার্ক ইন্দোনেশিয়া’ বিক্ষোভের নেতৃত্বে শিক্ষার্থীরা

 

বাজেট কাট নীতির বিরুদ্ধে ‘ডার্ক ইন্দোনেশিয়া’ বিক্ষোভের নেতৃত্বে শিক্ষার্থীরা



ইন্দোনেশিয়ায় বাজেটে কাট নিয়ে সরকারের বিভিন্ন নীতির বিরুদ্ধে রাজপথে নেমেছেন শিক্ষার্থীরা। শুক্রবার (২১ ফেব্রুয়ারি) জাকার্তাসহ প্রধান প্রধান শহরগুলোয় রাস্তায় নেমে আসেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। এক প্রতিবেদনে ব্রিটিশ সংবাদ সংস্থা রয়টার্স এ তথ্য জানায়।


প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রেসিডেন্ট প্রাবোও সুবিয়ান্তোর ১৯ বিলিয়ন ডলার ব্যয় হ্রাসের নীতিকে ‘ডার্ক ইন্দোনেশিয়া’ হিসেবে দাবি করছেন আন্দোলনকারীরা। তাদের শঙ্কা, এমন পদক্ষেপ সরকারের সামাজিক সহায়তা নীতিকে দুর্বল করবে। এই নীতি শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎকে অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দেবে।


বৃষ্টির মধ্যেই জাকার্তার প্রেসিডেন্ট প্রাসাদসংলগ্ন সড়কে জড়ো হন তাঁরা। প্রেসিডেন্টের সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের দাবি জানিয়ে আওয়াজ তোলেন আন্দোলনকারীরা। এ সময় আন্দোলনকারীদের বলতে শোনা যায়, কথা বলতে পারলে প্রেসিডেন্ট প্রাবোও সুবিয়ান্তোর প্রিয় বিড়ালটিও তাদের সঙ্গে যোগ দিত।


একটা সময় ছিলো যখন প্রবোও সুবিয়ান্তোর নাম বেশির ভাগ ইন্দোনেশিয়ানকে ভয় ধরিয়ে দিতো। হবেই না কেন? ধনী রাজনৈতিক পরিবারে জন্মগ্রহণ তার। একজন প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ যিনি ইন্দোনেশিয়ার মন্ত্রিসভায় দায়িত্ব পালন করেছিলেন তার পুত্র সুবিয়ান্তো। তবে, ১৯৫৭ সালে বিতর্কের মধ্যে দেশ ছেড়েছিলেন তার বাবা। বাবাকে অনুসরণ করে শৈশবের এক দশক ইউরোপে নির্বাসনে কাটিয়েছিলেন।

এরপর ফিরে আসেন নিজ দেশে। যোগ দেন সেনাবাহিনীতে। দ্রুত পদে উন্নীত হয়ে ইন্দোনেশিয়ার অভিজাত বিশেষ বাহিনী কোপাসাসের অধিনায়ক হন। পদোন্নতির সাথে সুবিয়ান্তোর জীবনে আসে এক কালো অধ্যায়। তৎকালীন অশান্ত পূর্ব তিমুরে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে অভিযুক্ত হন এই প্রাক্তন বিশেষ বাহিনীর কমান্ডার, যেখানে তিনি ইউনিটের সদস্য হিসাবে কাজ করেছিলেন।


তিমুরে সামরিক অভিযানে তার সঠিক ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। শত শত মানুষকে হত্যার জন্য অভিযুক্ত হন তিনি। যদিও হত্যাকাণ্ড কখনও প্রমাণিত হয়নি এবং তিনি অভিযোগ অস্বীকার করেই এসেছেন। তবে, ২০১৪ সালে আল জাজিরাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে অপহরণের নির্দেশ দেয়া তিনি স্বীকার করেন। তবে শুধুমাত্র ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশেই তা করেছিলেন তিনি।


ঐই ঘটনার পর প্রবোওকে সামরিক বাহিনী থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছিল। এরপর তিনি জর্ডানে স্ব-আরোপিত নির্বাসনে চলে গিয়েছিলেন। অস্ট্রেলিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণে ব্ল্যাক লিস্টেড ছিলেন তিনি।


এরপর ২০১৪ ও ২০১৯ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। যদিও তিনি হেরে যান। কিন্তু তার আসল প্রত্যাবর্তন ধরা যায় ২০১৯ সালে। সেই বছর, উইডোডো নির্বাচনে বিজয়ী হবার পর, সুবিয়ান্তোকে তার প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসাবে নিযুক্ত করেন। অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, উইডোডো; তার চির প্রতিদ্বন্দ্বীকে মিত্রে পরিণত করেছেন।


যদিও প্রবোও তার পরাজয়ের পেছনে ক্ষমতাসীনদের প্রতারণা রয়েছে বলে দায়ী করেছিলেন। সেই সময়ে সহিংস বিক্ষোভে আটজন নিহত হয়।


এরপর ২০২৪ সালে ইন্দোনেশিয়ার নির্বাচনে জয়ী হন প্রাবোও সুবিয়ান্তো। নির্বাচনী প্রচারণায়, তিনি নৃত্য পরিবেশন করে বেশ বিতর্কিত হয়েছিলেন। তার ডান্স স্টেপ সেসময় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টিকটকে বেশ সাড়া ফেলেছে। ইন্দোনেশিয়ার শিশু থেকে বৃদ্ধ, সব বয়সের মানুষ নাচেছেন সুবিয়ান্তো সেই ডান্স স্টেপে। সবার তাকে আদর করে নাম দিয়েছেন ‘কাডল ডেডি’।


তবে প্রেসিডেন্ট হিসেব নির্বাচিত হওয়ার চার মাস না পেরোতেই হয়ে এই প্রথম বড় এক সিদ্ধান্ত নিয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের তোপের মুখে তিনি। রাজপথের বিক্ষোভের পাশাপাশি সোশ্যাল মিডিয়াতেও তার বাজেট কাটছাঁট নীতির ব্যাপক সমালোচনা করছেন নেটিজেনরা।


সরকারের নীতিকে ডার্ক ইন্দোনেশিয়া নামকরণ প্রসঙ্গে এক ছাত্রনেতা বলেন, ইন্দোনেশিয়া অন্ধকারের মধ্যে রয়েছে। সরকারের নীতিগুলো অস্পষ্ট এবং সেগুলো গণবান্ধব মোটেই নয়। এমন বিবেচনা থেকেই এই নামকরণ করা হয়েছে।


ব্যয় সংকোচনের মাধ্যমে বেঁচে যাওয়া অর্থ বিভিন্ন নীতি বাস্তবায়নে, বিশেষ করে স্কুলগুলোয় পুষ্টিকর মধ্যাহ্নভোজ দেয়ার কাজে খরচ করতে চায় সরকার। তবে সরকারের এমন নীতির সমালোচনা করছেন শিক্ষার্থীরা। তারা বলছেন, এই পদক্ষেপের ফলে একদিকে টিউশন ফি বেড়ে যাবে; অন্যদিকে শিক্ষকদের ওপরও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।


Post a Comment

0 Comments